ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিনের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখণ্ড প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতার মিলনস্থল। খ্রিস্টান, মুসলিম ও ইহুদিদের কাছে এটি পবিত্র ভূমি। ইতিহাসে দেখা যায়, প্রাচীন কালে এই অঞ্চল বহুবার দখল ও শাসনের পরিবর্তন দেখেছে—রোমান, উসমানীয়, ব্রিটিশসহ নানা শক্তির শাসন ছিল এখানে।
২০শ শতকের শুরুতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে ফিলিস্তিন, এবং পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের ভূমি ও স্বাধীনতা হারানোর যন্ত্রণায় জীবন কাটাচ্ছে। এই ভূমির প্রতিটি ইঞ্চি তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সূচনা
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ফিলিস্তিনের জন্য ছিল এক বড় ট্র্যাজেডি। লাখো ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী হয়ে যায়—যা “নাকবা” বা বিপর্যয় নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ১৯৬seven সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ও পশ্চিম তীর দখল করে নেয়।
এর পর থেকে দখলদারিত্ব, বসতি নির্মাণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সামরিক অভিযান এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তোলে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুবার শান্তি আলোচনার চেষ্টা হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। প্রতিদিনের জীবনে ফিলিস্তিনি জনগণকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হতে হয়।
গাজা উপত্যকা ও মানবিক সংকট
গাজা উপত্যকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি, যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। ইসরায়েলি অবরোধ, সামরিক হামলা ও সীমিত সম্পদ গাজার মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে।
বিগত কয়েক দশকে বহুবার গাজায় বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে, যার ফলে হাজারো মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন, এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। হাসপাতাল, স্কুল ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহুবার এই পরিস্থিতি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সমাধান আসেনি।
আন্তর্জাতিক সমর্থন ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন বিশ্বব্যাপী অনেক দেশের সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়েছে। জাতিসংঘ ২০১২ সালে ফিলিস্তিনকে “নন-মেম্বার অবজারভার স্টেট” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বেশ কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের রাজনৈতিক অবস্থান এই ইস্যুতে জটিলতা তৈরি করেছে।
অন্যদিকে, তুরস্ক, কাতার, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে—মানবিক সাহায্য, চিকিৎসা সহায়তা ও কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে।
শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও রাজনৈতিক বিভক্তি সমাধানকে দীর্ঘায়িত করছে।
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ ও স্বাধীনতার স্বপ্ন
আজও ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন বুকে নিয়ে বেঁচে আছে। তরুণ প্রজন্ম শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতায়ন করছে, শিল্পী ও লেখকেরা বিশ্বকে তাদের গল্প শোনাচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আশা হারাচ্ছে না।
ভবিষ্যতে দুই-রাষ্ট্র সমাধান বা ন্যায্য রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এই সংঘাতের অবসান সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নিরপেক্ষভাবে মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উভয় পক্ষকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারে, তবে হয়তো একদিন ফিলিস্তিন স্বাধীনতার আলো দেখবে।
ততদিন পর্যন্ত “মাথা নোয়াবার নয়”-এর মতো এক অদম্য মানসিকতা নিয়েই ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।